১.
“কতদিন দেখা হয় না যমুনেশ্বরী”
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কতদিন দেখা হয় না
যমুনেশ্বরী নদী,
নীরবে বহে চলে
আজ অবধি |
যমুনেশ্বরীর বুক চিরে
ধু ধু বালিচর,
কবে থেকে হলে তুমি
আমার পর |
এক বুক ভালবাসা
এখন উত্তপ্ত বালি,
চোখের আড়ালে থেকে যায়
হৃদয়টা খালি |
যমুনেশ্বরী নদীর জলের
কুলুকুলু ধ্বনি,
চোখের জলে ভিজে যায়
তোমার চোখের মনি |
জলে ভরা নদী
তবুও মিটে না পিপাসা,
গভীর জলের মাঝে
তোমার চোখে বেঁধেছি বাসা |
নদীর শরীরে দোল খায়
সাদা কাঁশবন,
এক পলক দেখেই
হারিয়েছি মন |
প্রজাপতি খেলা করে
নদীর কূলে,
অজান্তে ঢেউ তোলে
তোমার কালো চুলে |
নদীর পাড়ে দেখতে পাইনি
কোন এক সন্ধ্যার সূর্যাস্ত,
রাখালের বেদনার বাঁশি শুনতে
হয়েছি ব্যস্ত |
চোখের জলে প্রবাহিত
যৌবনা যমুনেশ্বরী,
তোমাকে দেখতে পেয়ে
আনন্দে মরি |
যমুনেশ্বরী নদীর উপর
নীরব মেঘলা আকাশ,
বিদ্যুৎ চমকানো ভোরে
নিথর যৌবনের উচ্ছ্বাস |
২.
‘আমাদের গ্রাম’
°°°°°°°°°°°°°°°°°
আমাদের গ্রাম বড়ই পবিত্র
পবিত্র মানুষের মন,
প্রকৃতির বিশুদ্ধতায় বেড়ে ওঠা
জীবন যাপন অতি সাধারণ |
ফজরের নামাজের পর
কোরআন তেলাওয়াতের মধুর ধ্বনি,
হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে
মন বলে বার বার শুনি |
ভালবাসার মানুষগুলো শুয়ে আছে
সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত গোরস্থানে,
দু’হাত তুলে করি মোনাজাত
স্মরণ করি হৃদয় স্পন্দনে |
নদীর ধারে শীতল হাওয়া
ঘাস ফড়িং করে খেলা,
অন্ধকারাচ্ছন্ন মাটির ঘরে
জানি না কাটছে কেমন বেলা?
উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক পাখি
হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ জীবন,
হারিয়ে গেছে চেনা মুখ
অনেক আপনজন |
চেনা মানুষ অচেনা
কাছের মানুষ দূরে,
চোখের আড়ালে অভিমান
জীবন যায় ঘুরে |
নদীতে দেয় লাফ
ধরে বটগাছের ঝুলন্ত মূল,
তপ্ত দুপুর বেলা কি যে আনন্দ
সাঁতরে পৌঁছে যায় কূল |
হামান্ দিস্তার শব্দ
দাদিমার চুলে লাগানো তেলের সুগন্ধ,
ফোকলা দাঁতের হাসি
পুড়ছে মন সারাক্ষণ সবটাই এখন বন্ধ |
ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শুনতে
পেতেছে কান,
জোনাকি জ্বলে মিটিমিটি
রয়েছে পিছুটান |
আকাশে তারাগুলো গেথেছে মালা
জ্যোৎস্না ছড়ানো রাত,
শীতল পাটিতে বসে রূপকথার গল্প শোনা
পাখি ডাকা প্রভাত |
জ্যোৎস্নার আলোয় মাখা হাসি মুখ
সমস্বরে সুলতানা বিবিয়ানা,
স্মৃতিগুলো উজ্জ্বল
সময়টা নয় অজানা |
গ্রীষ্মকালের দুপুর বেলার ঘুম
উত্তপ্ত রোদের শাসনে,
আকাশে কালো মেঘ
ভয় হয় ঝড় তুফানে |
জেলেরা মাছ ধরে
হাঁটু জলে সাঁকোর কোনে,
কাদা মাখা শরীর
ভাওয়াইয়া – ভাটিয়ালি শোনে |
৩.
‘জল-জীবিকা-জীবন’
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মাথার উপর খোলা আকাশ
নিচে কাশবন,
স্রোতস্বিনী নদী
ভরা যৌবন |
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ঝরে
নদীর জলে,
মাছরাঙা খেলা করে
মাছের দেখা হলে |
হেলে দুলে চলে
বড় বড় সাম্পান,
দুঃখের সীমা নেই
যদি আসে বান |
নদীর উপর দিয়ে উড়ে যায়
রঙ বেরঙের পাখি,
মধুর দৃশ্য দেখে
জুড়ে যায় আঁখি |
জেলেদের মাছ ধরার
লেগেছে ধুম,
দিন রাত একাকার
চোখে নেই ঘুম |
কখনও রুই কাতলা
কখনও পুঁটি,
আনন্দে আত্মহারা
নদীতে ছুটোছুটি |