ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশ সফরের কথা ঘোষণা যে দিন হলো, সেই শুক্রবারই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ‘হিন্দু নিপীড়নের’ অভিযোগ তুলে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘসহ (আরএসএস) কয়েকটি সংগঠন। তারা ১০ ডিসেম্বর হাইকমিশন ঘেরাও করবে বলে জানিয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’–এর (এফওসি) বৈঠকে যোগ দিতে বিক্রম মিশ্রি ঢাকা যাচ্ছেন ৯ ডিসেম্বর। এর এক দিন পরই ১০ ডিসেম্বর ‘সিভিল সোসাইটি অব দিল্লি’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাও করবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শুক্রবার মিশ্রির সফরের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এর আগেই ঘোষিত হয় মিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি।
দিল্লি নাগরিক সমাজের ব্যানারে বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেওয়া হলেও উদ্যোগটা প্রধানত আরএসএসের। আরএসএসের দিল্লি শাখার গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার সহপ্রধান রজনীশ জিন্দাল গতকাল শুক্রবার দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বলেন, নাগরিক সমাজের এই কর্মসূচি ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়।
জিন্দাল অভিযোগ তুলে বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচারের ঘটনায় সারা ভারত ক্ষুব্ধ। ওই কর্মসূচিতে দেশের ২০০টির বেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাঁরা এক স্মারকলিপি পেশ করবেন। স্মারকলিপি দেবেন জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছেও। প্রত্যেককে বলা হবে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধে তারা ব্যবস্থা নিক।
সংগঠকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দিল্লির সব বাজার কমিটি, আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের সংগঠন, চিকিৎসক, আইনজীবী, ছাত্রসংগঠন ও দুর্গাপূজা, ছটপূজা, রামলীলার আয়োজক এবং শিখ ধর্মস্থান গুরুদ্বার পরিচালন কমিটির সদস্যদের ওই অভিযানে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
এই কর্মসূচি ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরের ওপর ছায়া ফেলবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফর ‘স্ট্রাকচার্ড’ হলেও ওই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার পাশাপাশি সংখ্যালঘু স্বার্থ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কাজেই ভারত চাইবে না, এমন কিছু হোক, যা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলে। নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
সূত্র স্বীকার করেছে, আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে যা ঘটেছে, তা সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। সরকারিভাবে তাই সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন দেখার, সরকারের পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।
ঘটনা হলো, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ‘নিপীড়নের’ ঘটনাকে বিজেপি ও আরএসএস রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ বিন্দুমাত্র হারাতে রাজি নয়। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক জমি খুঁজে পেতে ব্যর্থ বিজেপি এ নিয়ে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছে। একইভাবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি বিধানসভার ভোটের আগে বিজেপি ও আরএসএস সংঘবদ্ধ হয়ে আম আদমি পার্টির (এএপি) মোকাবিলায় বাংলাদেশকে হাতিয়ার করতে চাইছে।
বাংলাদেশ সরকার বারবারই বলে আসছে, পালাবদলের পর কিছু ঘটনা ঘটলেও যেভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা দুরভিসন্ধিমূলক। অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।
গতকাল শুক্রবার আরএসএসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার বীণা সিক্রি। তিনি বলেন, ইউনূস সরকার ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেনি। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান রাজীব জৈন।