১.
“কিভাবে লিখবো কবিতা”
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
রক্তাক্ত বর্ণমালা
শব্দের কান্নায় এলোমেলো খাতা,
তীরবিদ্ধ কথামালা
কিভাবে লিখবো কবিতা?
বৃক্ষরাজির চোখের জল
আঘাতে ক্ষত বিক্ষত সবুজ পাতা,
সূর্যোদয়ের সময় নয়নে পড়েনি সূর্যরশ্মি
কিভাবে লিখবো কবিতা?
অন্ধকার সারাটা বেলা
শামুকের ভিতর মুক্তা,
সূর্যাস্তের সময় আকাশ হয়নি লাল
কিভাবে লিখবো কবিতা?
আকাশে তারা নেই
বেদনায় ভরা বাস্তবতা,
চাঁদ জ্যোৎস্নার আলো না ছড়ালে
কিভাবে লিখবো কবিতা?
হৃদয় ভরা অভিমান
নেই কোন মুগ্ধতা,
চোখ রাঙানিতে মুছে দিতে চায় ভালবাসার স্তবক
কিভাবে লিখবো কবিতা?
বাতায়ন জুড়ে কাগজের ফুল
প্রকৃতিতে নেই স্নিগ্ধতা,
চিলেকোঠায় কাক ডাকে কা… কা…
কিভাবে লিখবো কবিতা?
ঘুমন্ত শহর
উচ্চস্বরে কাঁদতেও বাঁধা,
দুঃখগুলো কালো মেঘের আড়ালে
কিভাবে লিখবো কবিতা?
নির্দয় আঘাতে নিথর দেহ
প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে সভ্যতা,
সোনার বাংলার নীরবতা
কিভাবে লিখবো কবিতা?
আকাশে চাঁদ নেই
আঁধার রাতে শূন্যতা,
পাখিগুলো ঘরে ফেরে না
কিভাবে লিখবো কবিতা?
বিষাক্ত বাতাসের আঘাতে
হারিয়ে যায় বেলি ফুলের শুভ্রতা,
নর্দমার জলে সাঁতার কাটে অবুঝ মাছ
কিভাবে লিখবো কবিতা?
সবুজ ঘাস হয়েছে লাল
কালো কালির লেখা হয়ে যায় সাদা,
তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে
কিভাবে লিখবো কবিতা?
লাইট পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে কেটে যায় সারারাত
অনিশ্চিত পলাশ – শিমুল ফোটা,
চোখের জলে মুছে যায় কাজল
কিভাবে লিখবো কবিতা?
কথা বলতে হবে
বড়ই কষ্টের কথা,
হতে হবে আমি থেকে আমরা
কিভাবে লিখবো কবিতা?
২.
‘প্রগতি’
°°°°°°°°
মুক্তি আনবে তাই
জ্বলে উঠেছিলো বন্ধুরা ,
সুবাস ছড়াতে
ফুল ফুটেছিল নয়নতারা।
দেখেছিলো স্বপ্ন
তাই স্বপ্ন গড়ার পালা ,
অভিবাদন জানাতে
হাতে ফুলের মালা।
ঝিরি ঝিরি জলে
ফুটেছিল ফুল ,
ফুল ছিড়েছে দস্যুরা
ভেঙেছে নদীর কূল।
রঙ্গিন স্বপ্নটা হাসে
চারিদিকে সাজ সাজ ,
স্বপ্নকে বেঁচে রাখা
প্রগতির কাজ।
ঘড়ির কাঁটা থামাতে চায়
তাই সময়টা বিব্রত ,
প্রগতির চাকা ঘুরাতে
ফুল ফুটেছে শত শত।
৩.
‘স্মৃতি’
°°°°°°°
স্মৃতিগুলো ঢেকে যায়
কুয়াশার চাদরে,
সূর্য্যের কিরণে ভেসে উঠে স্মৃতি
শ্রাবণ সন্ধ্যার আদরে |
সাদা হাঁস সাঁতার কাঁটে
পুকুরের জল শান্ত,
হৃদয় সমুদ্রে ঢেউ উঠে
আঁখিকে করে বিভ্রান্ত।
ভেজা স্মৃতির গায়ে শিশির বিন্দু
শীতে উত্তাপ দাও,
পড়ে আছে নিথর দেহ
মধুর স্মৃতিগুলো উধাও।
বেদনার স্মৃতি তাড়া করে
কম্পিত হৃদয়,
সময়কে করে বিভ্রান্ত
কীট – পতঙ্গের ভয়।
শিউলি ফুলগুলো এখনও সতেজ
স্মৃতির গায়ে মাটির সোঁদা গন্ধ,
পাঞ্জাবির ভাঁজ এখনও স্পষ্ট
কানে বাজে নুপুরের ছন্দ।
৪.
‘আকাশ হয়েছে নীল’
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
শূণ্যে ভাসে ছেঁড়া কাগজ
চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার,
গুরুম গুরুম শব্দ
গগন থেকে ভেসে আসে হুঙ্কার।
সারাটা দিন বারিপাত
জলে ভরা নদী,
প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বড়ই মধুর
তটিনীতে চাঁদের আলো পড়ে যদি।
কাশঁফুল পবনে দোলে
তটিনী পেয়েছে ভরা যৌবন,
জল পথে চলে নৌকা
কেড়েছে মানুষের মন।
ভেঙেছে বিহঙ্গের বাসা
উড়ছে চালের টিন,
জলে ভেজা নিয়তি
হয়েছে অর্বাচীন।
গভীর বারির নিচে
ধান গাছের বসবাস,
প্রকৃতির আঘাতে
হয়েছে সর্বনাশ।
দিনেও আঁধার তাই
দীপ্তির সন্ধান,
দোদুল্যমান ভাবনার মাঝে
ওষ্ঠাগত প্রাণ।
উম্মুক্ত জানালা
আকাশে উড়ছে চিল,
থেমে গেছে ঝড়
আকাশ হয়েছে নীল।
মো. সরওয়ার হক চৌধুরী,
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক