একসঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছে কানাডার টরন্টো শহরের ১৫টি সংগঠন। যৌথভাবে আয়োজিত ‘বিজয় পথের পাঁচালী’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠান গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টায় হোপ ইউনাইটেড চার্চ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজন শুরুর আগেই শিল্পীরা ভেন্যুতে এসে হাজির হন। নারীরা পরে এসেছিলেন বাংলাদেশের পতাকার মোটিফ লাল–সবুজ শাড়ি। আর পুরুষদের পরনে ছিল সবুজ পাঞ্জাবি। শিশু-কিশোরদের পোশাকেও ছিল বাংলাদেশের পতাকার রং। পুরো আয়োজনে ছিল বাংলা, গান, কবিতা, গানের তালে নাচ, বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের অভিব্যক্তি, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের একজনের শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নাটিকা প্রভৃতি।
আয়োজন শুরুর আগেই মিলনায়তনে আসেন দর্শক। তাঁদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে আয়োজনস্থল। পুরো আবহে ছিল একখণ্ড বাংলাদেশের ছবি। আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজনটি শুরু হলে বোঝার উপায় ছিল না দেশ নাকি বিদেশে উদ্যাপন হলো বাংলাদেশের বিজয় দিবস।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হলো অন্যস্বর, অন্য থিয়েটার, তারানা ড্যান্স গ্রুপ, আইএম ক্রিয়েটিভ ল্যাব, উদীচী কানাডা, প্রজন্ম একাত্তর, গীতাঞ্জলি মিউজিক একাডেমি, সুর, টরন্টো থিয়েটার ফোকস, নৃত্যকলা কেন্দ্র, বাচনিক, বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো, বাংলাদেশ ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা, সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন, উত্তরের জানালায়।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। আয়োজনে অংশ নেওয়া শিল্পীরা ও এ প্রজন্মের শিশু-কিশোর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত দুটি পরিবেশন করে।
এরপর শুরু হয় মূল আয়োজন। এই পর্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান ও স্মৃতিচারণা করেন ডাক্তার মোহাম্মদ মোর্তজার মেয়ে দ্যুতি অরণি মিতি। এ প্রজন্মের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন নিসর্গ ও রাহিনা।
সমবেত কণ্ঠে দেশের গান ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত পরিবেশন করেন ৪৫ কণ্ঠশিল্পী। সুমন সাইয়েদ ও সুমন মালিকের পরিচালনায় এতে অংশ নেন লিনা ডি কস্টা, ইলোরা সাইদ, ফ্লোরা শুচি, মিথুন রেজা, জেসমিন আসগর, আসিফ চৌধুরী, কাশফি আসগর, মেরী রাশেদীন, নুসরাত জাহান চৌধুরী, রাশেদ মাহমুদ, মেহজাবীন বিনতে ওসমান, রিফাত নূয়েরীন, রিক্তা মজুমদার, সারা জাহান, শাপলা শালুক, সৈয়দা মার্জিয়া আফরোজ, মোহনা মিফতাহুল, মাধব কর্মকার ঋদ্ধি, সোফিয়া হাবিব, সেরীনা নুজহাত, ফারজানা কান্তা, সালিকা বারী, জান্নাতুল ফেরদৌস, এলিজা সুলতানা এলি, সবিতা সোমানী, আরিজ সুনান, ফাতমা বিদুর, আফসানা কলি, মো. আবদুল জলিল, রাশেদুল ইসলাম, আরাফাত আহমেদ বাপ্পী, তাহমিনা রহমান, আবদুল বারী, তানজিয়া রহমান টিনা, নুসরাত শারমিন, লিজা রহমান, পাপিয়া জাকির, মুহাম্মাদ মুস্তাফা জগলুল, ফারজানা বেবী, সৈয়দ শাহজাহান আলী ও ফারজানা চৌধুরী বিন্দু।
অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন বিপ্লব করের প্রতিষ্ঠান নৃত্যকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা, অরুনা হায়দার ও তাঁর দল সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন, সীমা বড়ুয়া ও তাঁর দল গীতাঞ্জলি, পারমিতা তিন্নির তারানা ড্যান্স গ্রুপ, ও আইএম ক্রিয়েটিভ ল্যাব।
কবিতা আবৃত্তি করেন অন্যস্বরের আসিফ চৌধুরী, ফারিয়া শারমিন, ইলোরা সাঈদ, মানবী মৃধা, ফারজানা হক, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফারিহা রহমান, রিফাত নূয়েরীন, আনিসা লাকী এবং বাচনিক থেকে অংশ নেন মেরী রাশেদীন, শাপলা শালুক, লিনা আগ্নেস, সারা জাহান, আবদুল জলিল ও মাধব কর্মকার।
পুরো আয়োজনে সংগীতে সংগত করেন কিবোর্ডে জাহিদ হাসান, গিটারে আসিফ চৌধুরী ও অক্টোপ্যাডে রাজীব।
আহমেদ হোসেনের নির্দেশনায় একটি অনু নাটক মঞ্চস্থ হয়। এতে অভিনয় করেন ফারজানা চৌধুরী বিন্দু, মাহমুদা তিশা, রিফাত নূয়েরীন ও সারা জাহান। নাটকটির মূল ভাবনা নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ জেনোসাইড অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড প্রেস, মূল সংগ্রহ ও সম্পাদনা ফজলুল কাদের কাদেরীর গ্রন্থ থেকে, যার বাংলা অনুবাদ করেছেন দাউদ হোসেন।
গানের দল সুরের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শেষ হয়। মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে গান পরিবেশন করেন ময়ূখ সাইয়েদ ও শবনম সায়েলা তনুকা।
পুরো আয়োজন সঞ্চালনা করেন ফারিহা রহমান ও মাধব কর্মকার।
অনুষ্ঠানটি পৃষ্ঠপোষকতা করেন শামীম আরা, সুমন সাইয়েদ, রাকিব রাশেদীন ও হিশাম চিশতী, ওমর জাহিদ, ফারাহ খান, হাকিম খান, আবুল আজাদ। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ড্যানফোর্থ সাউন্ড, আলো প্রক্ষেপণ করেন মিথুন রেজা। মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ইত্তেলা আলী ও মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন বদরুদ্দোজা সিদ্দিকী, নয়ন হাফিজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের ভিডিওধারণ ও স্থিরচিত্র সংগ্রহ করেন রাশেদ শাওন। আয়োজনটির সমন্বয়ক ছিলেন সুমন সাইয়েদ, মেরী রাশেদীন, ফারজানা চৌধুরী বিন্দু ও ইত্তেলা আলী।